বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন জীবিকা, অবকাঠামোগুলোকে ধ্বংস করায় অসহায় মানুষ বাধ্য হচ্ছে তাদের ঘর-বাড়ি, শহর এমনকি দেশ ছাড়তে। শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই আবহাওয়ার চরম বিপর্যয়ে প্রায় ২৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এসব ভয়াবহ সংকটের শিকার হওয়া দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বন্যার্ত মানুষের ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণে দেশটি এখন ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গ্রাউন্ড জিরো’ হিসেবে পরিচিত। এবার এর মূল কারণের সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় জেনে নেয়া যাক।
সাম্প্রতিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঘটনা
বিংশ শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় বৃদ্ধি ছিল প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার। ১৯৯৩ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ৩ মিলিমিটার হারে বেড়েছে। গত এক দশক ধরে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও পূর্ব ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি।
ঢাকার সার্ক আবহাওয়া কেন্দ্রের রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের উপকূলের মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক মাত্রার মধ্যে অবস্থান করছে- সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট (প্রতি বছর ৪ মিলিমিটার), হাতিয়ার চর চাঙ্গা (প্রতি বছর ৬ মিলিমিটার) ও কক্সবাজার (প্রতি বছর ৭.৮ মিলিমিটার)।
আরও পড়ুন: চালু হলো দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প
এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে বসবাসরত এবং বার্ষিক বন্যার সম্মুখীন হওয়া মানুষের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ।
বাংলাদেশ নিয়ে আশঙ্কা
২০২১ সালের শেষের দিকে মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৮তম অধিবেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ প্লাবিত হয়ে যাবে। এর ফলে প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুহারা হবে।
ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের রিপোর্ট মতে, ২০১৯ সালে চীন, বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনের দুর্যোগের ফলে বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ গোটা বিশ্বের ৭০ শতাংশ।
২০২১ সালে গ্লাসগোর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সেন্টার ফর ইনভার্নমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্যানুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ৯০ সেন্টিমিটারে পৌঁছবে।
কেন বাড়ছে সমুদ্রের পানি
ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) রিপোর্ট অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠ উল্লম্ব থেকে আনুভূমিক দিকে পরিবর্তিত হয়। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উল্লম্ব আন্দোলন থেকে এই আনুভূমিক ব্যাপ্তিতে রূপ নেয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।